প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ে এসডিজি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। কিন্তু আমি এখনো বিশ্বাস করি, সম্মিলিত প্রচেষ্টার পাশাপাশি যথাযথ ও উদ্ভাবনী কর্মপরিকল্পনা এবং কার্যকর পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে এ লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা সকলে মিলে একসঙ্গে কাজ করলে ২০৩০ সালে আগেই নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন এবং ২০৪১ সালের পূর্বেই জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সক্ষম হব।’
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ও এসডিজি অর্জনে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সরকার এ লক্ষ্যে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য নীতি সহায়তা ও তহবিল প্রদান অব্যাহত রাখব। তবে আমাদের অবশ্যই তহবিলের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অপচয় রোধ করতে হবে। একই সময়ে আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি যথাযথভাবে পূরণ এবং তা যেন বাস্তবায়িত হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া দরকার।’
শেখ হাসিনা বলেন, আশা করা যায়, এ অগ্রাধিকার তালিকা অনুযায়ী জেলা, উপজেলা, স্থানীয় পর্যায়ের সব সরকারি দপ্তরে দ্রুত ও সফলতার সঙ্গে এসডিজি পরিবীক্ষণ ও বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। দেশের চলমান উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের পথে আমরা সাত বছর অতিক্রম করছি। গত দুই বছর কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির কারণে এসডিজি বাস্তবায়ন গতি কিছুটা মন্থর হয়েছে। তবে সরকার সামর্থ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে। কাজ করে যাবে।’
উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলায় সবার অংশগ্রহণের ওপর পুনরায় গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, লক্ষ্য অর্জনে সবাই একসঙ্গে কাজ করলে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের আগেই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের পক্ষ হতে সময়োচিত প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদান ও যথাযথ নীতি সহায়তা প্রদানের কারণে অর্থনীতি আবার ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসছে। নির্দিষ্ট সময়ে এসডিজির পথপরিক্রমা নিশ্চিত করা কঠিন। তবে আমি বিশ্বাস করি, সঠিক ও উদ্ভাবনী কর্মপরিকল্পনা ও কার্যকর পরিবীক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। এ প্রেক্ষাপটে এসডিজি ইমপ্লিমেন্টেশন রিভিউ কনফারেন্স ২০২২ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করেই আমাদের এটা পর্যালোচনা করা দরকার।’
শেখ হাসিনা বলেন, কোন কোন ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্ব দেওয়া হবে, সেটা নির্দিষ্ট করা দরকার। যেগুলো ইতিমধ্যে অর্জন হয়েছে, সেগুলো ধরে রাখতে হবে। যেহেতু প্রেক্ষাপট যথেষ্ট পরিবর্তিত হয়েছে, বিশ্বব্যাপী একটা অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিচ্ছে, খাদ্যাভাব দেখা দিচ্ছে, তাই ভবিষ্যতে কী কী বিষয় অর্জন করতে হবে, তা নির্দিষ্ট করা দরকার। সে ক্ষেত্রে তিনি দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখতে দেশবাসীর প্রতি তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। দেশে যে সম্পদ রয়েছে, তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পানি, বিদ্যুৎ, খাদ্যশস্য—প্রতিটি জিনিসের ব্যবহারেই সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। কারণ, আমরা জানি, কোভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট মন্দার ধাক্কা সবখানেই দেখা দিচ্ছে। ফলে আমাদের দেশের মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, সে জন্য দেশের প্রতিটি পরিবার ও মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।’
এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রেও আশু করণীয় ও দীর্ঘমেয়াদি করণীয় যথাযথভাবে নির্ধারণ করে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম ও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক (ভারপ্রাপ্ত) তুওমো পাউতিয়ানেন বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ।
জিইডির সদস্য (সচিব) মো. কাওসার আহমেদ বাংলাদেশের এসডিজি অগ্রগতি ও এসডিজি অর্জনের পরিকল্পনা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে এসডিজি-বিষয়ক একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। প্রধানমন্ত্রী এসডিজি-বিষয়ক একটি প্রকাশনার মোড়কও উন্মোচন করেন।
