নীলফামারী প্রতিনিধি:
বাড়িতে মা-বোনদের আঁচড়ানোর পর ওঠা চুল কিংবা সেলুনের চুলও এখন ফেলনা নয়। একশ্রেণীর ফেরিওয়ালা বাড়ি বাড়ি ঘুরে এসব চুল সংগ্রহ করেন। ফেলনা এই চুলের দামও একেবারে কম নয়। কয়েক হাত বদল করে সেই চুল যায় কারখানায়। তৈরি হয় পরচুলা। যার গন্তব্য দেশের সীমানা পেরিয়ে ইউরোপ-আমেরিকা। খুব বেশি না হলেও প্রতিবছর বৈদেশিক মুদ্রা আনছে এই ফেলনা চুল। বাড়ছে কর্মসংস্থান। গ্রামীণ নারীদের বড় একটি অংশ যুক্ত এ কাজে। মাসে ৮ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন তারা। বাংলাদেশে আসছে কোটি কোটি ডলার।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় মাথার পরচুলা বানিয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে রিনা আক্তার নামের এক নারী উদ্যোক্তা।
জানা গেছে, স্বাধীনতাযুদ্ধের পর কয়েকজন উদ্যোক্তা এই ব্যবসা শুরু করেন। তবে দুই দশকে তা সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। সম্ভাবনা দেখে এ খাতে আসে বিদেশি উদ্যোগ। লক্ষাধিক মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আট বছর আগেও উইগ বা পরচুলা রফতানি করে কোটি ডলার অর্জন ছিল স্বপ্নের মতো। তবে এই চিত্র বদলেছে। সামনে দেখা দিচ্ছে আরো সম্ভাবনা। প্রক্রিয়াজাত চুল ও চুলের টুপি বা উইগ দুইভাবে রফতানি হয়। এক সময় শুধু বিদেশে রফতানি হলেও এখন দেশেও পরচুলার কদর বেড়েছে।
বাজার বিশ্লেষণে জানা যায়, চীন, কোরিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে উইগ বা পরচুলার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন অসুস্থাজনিত কারণে যাদের মাথার চুল পড়ে যায় তারাসহ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিজ উইগের বড় ক্রেতা। হ্যালোইন, ক্লাউন, ক্যারিবিয়ান প্যারেড, সাম্বা ড্যান্সসহ বিভিন্ন উৎসবে যায় বাংলাদেশের পরচুলা।
আর চীনের প্রায় ২৫-৩০ কোটি লোক চুল পড়ার সমস্যা ভুগছে। তাদের মধ্যে বড় একটি অংশ তরুণ বা উঠতি বয়সীরা। তরুণরা সারা জীবন টাক মাথা বয়ে বেড়াতে চান না। সেজন্য চুলে যত্ন সামগ্রীর চাহিদা বাড়ছে।(গ্লোবাল টাইমস)। গ্রাম বাংলায় একটি প্রচলিত আছে, টাকার চিন্তা করলে মানুষের মাথার চুল পড়ে যায়। চীনারা এখন টাকার পিছুনে ছুটছে। সেই সঙ্গে চীনাদের টাক মাথার সংখ্যাও বাড়ছে।
কর্মীরা জানান, এ কাজ করে প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করছেন তারা। হেয়ার ক্যাপ তৈরির আগে দুই থেকে তিন দিন সবাইকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
নারী উদ্যোক্তা রিনা আক্তারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ২০২১ সালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নেন। নেওয়া পরে গ্রামে এসে নিজ প্রচেষ্টায় গড়ে তুলে ছোট একটি কারখানা। সেখানে দু-একজন করে শিখতে শিখতে সংখ্যা হয়েছে সংখ্যা হয়েছে ২২। বলা চলে তারা অধীনে এখন আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে নিয়েছে অজপাড়াগাঁয়ের বেকার ২২ জন নারী।
তিনি আরো বলেন, যদি পল্লী উন্নয়ন কর্মসংস্থান বা সরকারে সহযোগীতা করেন তাহলে এ কাজ কি আরো প্রসার ঘটাবেন ।
