গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের নিমোইল গ্ৰামের দিনমজুর সাইফুদ্দিন। চার ছেলে, দুই কন্যা ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। বর্তমানে বয়সের ভারে ক্লান্ত তিনি। নিজের জায়গা জমি বলতে কিছুই নেই। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করে। সাইফুদ্দিনের তিন ছেলে সন্তান ইতিমধ্যে বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছে। ছোট ছেলে আখতারুল বাবা মায়ের সাথে থেকে তাদের কাজে সহযোগিতা করে। তাদের সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকে। এতো কষ্টের মধ্যেও আখতারুল লেখাপড়া চালিয়ে গেছে। ছাত্র হিসেবে মেধাবী হওয়ায় ও অত্যাধিক পরিশ্রমের ফলে সে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে একই সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। আখতারুলের শিক্ষাজীবন শুরু হয় সোনানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। ২০২৪ সালে পিএসসিতে জিপিএ -৫ পেয়ে মৃধাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। সেখান থেকে ২০১৭ সালে জিএসসিতে জিপিএ-৫ এবং ২০১৯ সালে এসএসসিতে জিপিএ -৫ পেয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়। পরবর্তীতে তার যোগ্যতায় সে রাজশাহী নিউ গর্ভমেন্ট ডিগ্ৰি কলেজে ভর্তি হয়। সেখান থেকে সে ২০২১ সালে জিপিএ -৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। অভাবের কারণে সে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় গ্ৰামের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়িয়ে এবং অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে তার লেখাপড়ায় খরচ জোগায়। এছাড়া সে এসএসসি পরীক্ষার পর নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করে তার এইচএসসি ভর্তির টাকার জোগাড় করে। সে সময় নিউ গর্ভমেন্ট ডিগ্ৰি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ড. শাহাদাৎ হোসেন তাকে ছাত্রাবাসে থাকার সুযোগ করে দেন।
তার সাথে কথা হলে সে জানায়, আমি দারিদ্রতার মধ্যে বড় হয়েছি। অন্যের জমিতে বাবার সাথে দিনমজুরের কাজ করেছি। আমার পিতা-মাতা আমার লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক কষ্ট সহ্য করেছে। করোনাকালীন সময়ে কলেজ বন্ধ থাকায় গ্ৰামের বাড়িতে এসে প্রাইভেট পড়িয়ে ও দিনমজুরের কাজ করে এইচএসসি’র খরচ জুগিয়েছি। দু’টা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। কারণ ছোট থেকেই আমার স্বপ্ন ছিলো ঢাকায় পড়াশোনা করার ।মহান আল্লাহ আমার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। এখন আপনাদের সকলের দোয়া ও ভালোবাসায় বিসিএস দিয়ে প্রশাসন ক্যাডারে অংশ নিতে চাই।
আখতারুলের বাবা সাইফুদ্দিন বলেন, অভাবের কারণে আমার ৬ সন্তানের মধ্যে আখতারুল ব্যতিত অন্য সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারিনি। কিন্তু আখতারুলের লেখাপড়ার প্রতি চরম আগ্ৰহ থাকায় আর থেমে থাকেনি। কষ্ট হলেও তাকে লেখাপড়া করিয়ে গেছি। এখন একটাই স্বপ্ন আখতারুল লেখাপড়া শিখে একটি চাকরি করে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। দিনমজুর বাবা হিসেবে আমি যেন গর্ববোধ করতে পারি।
মৃধাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, শুরু থেকেই মেধার স্বাক্ষর রেখেই চলেছিলো আখতারুল। আজ সেই নিজ যোগ্যতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে এজন্য আমিসহ আমার স্কুলের সকল শিক্ষক গর্ববোধ করি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ফলাফল প্রকাশের পর তার ভর্তির টাকা নিয়ে সে দুশ্চিন্তায় পড়ে। সংবাদ পেয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা প্রশাসন ও রহনপুর পৌরসভা তার পাশে সহযোগিতার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। গোমস্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন রেজার উপস্থিতিতে উপজেলা নিবার্হী অফিসার আসমা খাতুন তার হাতে আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেন। একই ভাবে রহনপুর পৌর মেয়র মতিউর রহমান খাঁন আখতারুলকে আর্থিক সহায়তা করেন। বর্তমানে সে তাদের আর্থিক সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু এখনো চিন্তা রয়েছে তার মাথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার খরচ জোগানো নিয়ে। মেধাবী এই শিক্ষার্থীর পাশে সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি কিংবা কোন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসতে পারেন।
