ঢাকাSunday , 14 August 2022
  • অন্যান্য

ভেরি বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত বাকেরগঞ্জ পৌর এলাকা !

admin
August 14, 2022 5:08 pm
Link Copied!

 

খান মাহাদী :

– বরিশাল বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সব নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বাকেরগঞ্জ পৌর এলাকা সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের আশপাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। লঘুচাপ ও পূর্ণিমার প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। জোয়ারের সময় উপকূলের নদ-নদীতে আগের চেয়ে বেশি পানি প্রবেশ করছে। এতে বেশিরভাগ নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১১আগস্ট) বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলানুসন্ধান বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুম জানান, বিভাগের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ ১০টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৈরী আবহাওয়া,পূর্ণিমার প্রভাব এবং বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ বিদ্যমান থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিকে বন্যা বলা যাবে না। এটি মৌসুমী পানি প্রবাহ। আশা করা যাচ্ছে দুই দিন পর নিরাপদ সীমায় নামবে নদীর পানি প্রবাহ।

১১ আগস্ট বাকেরগঞ্জ পৌর এলাকায় বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় গত দুই দিন যাবত তুলাতলী নদী বেশ উত্তাল রয়েছে। বাতাসের গতিবেগও অনেক। অনেকটা ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে নদীর পানি বাড়ছে। নদী তীরবর্তী অনেকের বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে গেছে। নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে তুলাতলী নদীতে। উপজেলা পৌর এলাকা সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পৌর এলাকার চরাঞ্চলের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পরেছে। পৌর এলাকায় ভেরি বাঁধ না থাকায় দুই দিন টানা বৃষ্টি ও পূর্ণিমার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে পৌরসভার ২,৩,৫,৬ নং ওয়ার্ড সহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্ন অঞ্চল।

প্রতিবছর ঝড়-বন্যা-জলোচ্ছ্বাসের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয় তাদের। প্রতি বছর যখনই ঝড় বন্যায় নদীর পানি বৃদ্ধি পায় তখন দুর্বল ভেরি বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে পৌরসভার ২,৩,৫,৬ নং ওয়ার্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাজারো পরিবারের মানুষ। ভেসে যায় মৎস্য ঘের, ফসলি জমি সহ ঘর বাড়ি। উপজেলা চত্বর সাহেবগঞ্জ থেকে রুহিতারপাড় ৬ নং ওয়ার্ড দিয়ে বয়ে যাওয়া ভেরি বাঁধ প্রায় ১ কিলোমিটার বর্ষা মৌসুমের জলোচ্ছ্বাসে ভাঙ্গনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। ভাঙ্গনে নদীগর্ভে চলে গেছে শত শত পরিবারের ভিটেমাটি। এ বিষয়ে পৌর মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া জানান, প্রতিবছর পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের অর্থায়নে কয়েকটি ওয়ার্ডে ভেরি বাঁধ পুননির্মাণ করে থাকে তবে দুর্বল ভেরি বাঁধ কখনোই টেকসই বাঁধ হয়ে ওঠে না। প্রতিবছর বন্যার কবলে ভেরি বাঁধ আবারও ভেঙে প্লাবিত হয়। ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয় পৌর এলাকাবাসী। ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুমন জানান, হেলিপ্যাড থেকে রুহিতার পাড় পর্যন্ত যে ভেরি বাঁধ তা প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে নদীগর্ভে চলে যায়। টেকসই ভেরি বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় প্রতি বছর ঝড়, বন্যা, জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পায় কোথাও ভেরি বাঁধ ভেঙে, কোথাও ভেরি বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয় এলাকাবাসী।

এ প্রসঙ্গে পৌর ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সেলিম জানিয়েছেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও বাকেরগঞ্জ উপজেলা শহর ও পৌর এলাকায় টেকসই ভেরি বাঁধ নির্মান হয়নি। কাঁচামাটির বাঁধকে স্থায়ী করার জন্য যুগ যুগ ধরে দাবি জানালেও তা হয়নি। এরপর আজকে বাঁধ ভেঙে আমাদের গোটা এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে। কখনো এলাকাবাসীর অর্থায়নে কখনো পৌর কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে ভেরি বাঁধ সংস্কার করা হলেও কয়েক মাস পরেই নদীগর্ভে চলে যায়। প্রতিবছর কোন না কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় আমাদের ঘর বাড়ি সহ আয়ের প্রধান উৎস মাছের ঘের। কেবল জীবন যাত্রায় বিপন্নতা নয়, অর্থনীতিতেও নেমে আসে দুরবস্থা। বাঁধ ভেঙ্গে গ্রামে প্রবেশ করেছে নদী পানি যা জনসাধারণের বসত ঘর, রান্না ঘর ছুয়ে যায়। কিছু স্থানে গবাদী পশু আর মানুষ একই সাথে বসবাস করতে হয় তখন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতায় আজও এই ভেরি বাঁধে মাটি দেওয়া হয়নি। বর্ষা মৌসুম আসার আগেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি এই বছর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন তাহলে শীঘ্রই পৌর শহর মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস জানান, শীঘ্রই আমরা ভেঙে যাওয়া ভেরি বাঁধ সহ তুলাতলা নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো পরিদর্শন করে কি পরিমান বাজেট প্রয়োজন হতে পারে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বরিশালসহ দক্ষিণের জেলাগুলোর বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। সাথে ঝড়ো বাতাস বয়ে চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে ২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের নদীবন্দরগুলোকে দুই নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুম জানান, আসন্ন পূর্ণিমা ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে এই পরিস্থিতি। তবে গতকারের চেয়ে আজ প্রায় সব নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করছে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।