রিফাত হোসেন মেশকাত:
স্টাফ রিপোর্টার ১৪-০৯-২০২৫ ইং
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জয়পুরহাট-২ (কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর) আসনে রাজনৈতিক অঙ্গন সরব হয়ে উঠেছে। বিএনপির প্রার্থীরা ভোটারদের সমর্থন অর্জন এবং দলের কাছে নিজেদের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে তারা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করছেন। একই সাথে জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। বিএনপিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক, দোয়া মাহফিল, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তারা জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ‘রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা’ জনগণের মাঝে তুলে ধরতে এবং তাদের সম্পৃক্ত করতে দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বিশেষ প্রচারণা চালাচ্ছেন। গ্রাম থেকে উপজেলা শহরের অলিগলি, হাট-বাজার সবখানেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন এই আসনে কে হবেন বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থী?
জয়পুরহাট-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যেই বিএনপি’র হাফ ডজন নেতা সহ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী সরব হয়ে উঠেছেন। সাবেক সচিব ও ডিসি আব্দল বারী, কেন্দ্রীয় বিএনপির রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বে থাকা সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এএইচএম ওবায়দুর রহমান চন্দন, সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রেরণকারী ক্যাটাগরিতে সিআইপি সম্মাননা প্রাপ্ত ও জিয়ারউর রহমান ফাউন্ডেশন এর অন্যতম সদস্য ও অ্যাব নেতা ইঞ্জিনিয়ার আমিনুর ইসলাম, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন সিরাজুল ইসলাম বিদ্যুৎ, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করা রাজপথের সাহসী ছাত্রনেতা আব্বাস আলী। সকলেই “রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা” বাস্তবায়নে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে প্রার্থীরা বিশেষ প্রচারণা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে জয়পুরহাট জেলা শাখার সহকারী সেক্রেটারী ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান এস.এম. রাশেদুল আলম সবুজ পৌরসভা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও ইসলামিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
আক্কেলপুর উপজেলার বিএনপি’র অন্যতম নেতা, আক্কেলপুর পৌরসভার সাবেক পৌর মেয়র আলমগীর চৌধুরী বাদশা বলেন, আমরা সবাই লক্ষ্য করছি, আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রার্থীগণ এলাকাবাসীর সঙ্গে ব্যাপক গণসংযোগ করছেন। গণসংযোগ একটি ভালো দিক, এতে জনগণ সরাসরি প্রার্থীর ভাবনা ও কর্মপন্থা জানার সুযোগ পান। তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো বিএনপির মনোনয়ন যেন এমন প্রার্থীকে দেওয়া হয় যিনি সত্যিকারের ত্যাগী, সৎ এবং জনগণের পাশে দাঁড়াতে সক্ষম। আমাদের এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তরুণ নেতৃত্ব, যারা শিক্ষা-দীক্ষায়, আধুনিক চিন্তায় ও সততায় এগিয়ে থাকবে। একই সঙ্গে তাঁরা যেন দলীয় গ্রুপিং, দলাদলি ও ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে এলাকার উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণে কাজ করেন।
আমরা চাই, বিএনপির মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থী হোক এমন একজন, যিনি শুধু নির্বাচনে জয়লাভের জন্য নয়, বরং রাষ্ট্রের কাঠামোকে সুদৃঢ় করতে, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে, এবং বিশেষ করে তরুণদের সম্পৃক্ত করে একটি সুন্দর, গ্রহণযোগ্য ও গ্রুপিংমুক্ত সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখবে।
যে প্রার্থী জনগণের দুঃখ-কষ্ট বুঝবেন, গ্রামের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি শ্রেণির পাশে থাকবেন তারাই জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবেন। বিএনপির উচিত এমন প্রার্থী বেছে নেওয়া, যিনি সত্যিকারের যোগ্যতা ও সততার মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী করবেন এবং জনগণকে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ উপহার দেবে ও দেশ নায়ক তারেক রহমানের রাষ্ট মেরামতের ৩১ দফা সফল ভাবে বাস্তবায়ন করবে।
তিলকপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জনতার চেয়ারম্যান খ্যাত মোঃ মোজাফ্ফর হোসেন বলেন আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি এমন প্রার্থী চাইবে, যিনি দুঃসময়ে দলকে আঁকড়ে রেখেছেন, আমাদের প্রয়োজন এমন একজন ত্যাগী নেতা, যিনি শুধু দলের জন্য নয়, জনগণের কাছেও জনপ্রিয় ও আস্থাভাজন মুখ হিসেবে পরিচিত। দল এমন কাউকে অগ্রাধিকার দেবে, যিনি দুর্নীতি, চাঁদাবাজ ও গ্রুপিং মুক্ত নেতিবাচক রাজনীতির বাইরে থেকে সৎ ও পরিষ্কার ভাবমূর্তি বজায় রেখেছেন। বিশেষ করে তরুণ সমাজ ও নতুন ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে তাদের নেতৃত্বে অংশ নিতে উৎসাহিত করবে।
আক্কেলপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক এস এম মাহমুদুল হাসান তুষার বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা দেখছি বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ চালাচ্ছেন। জনগণের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি ইতিবাচক ধাপ। তবে কেবল গণসংযোগের মাধ্যমে প্রার্থী নির্ধারণ করলে চলবে না মনোনয়ন যেন সেই ব্যক্তিকেই দেওয়া হয় যিনি ত্যাগী, সৎ এবং জনগণের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ।
বর্তমান প্রজন্ম চায় বিএনপি থেকে এমন প্রার্থী মনোনয়ন পাক, যিনি তরুণদের মতামতকে গুরুত্ব দেবেন, নতুন ধারার নেতৃত্ব তৈরি করবেন এবং দলের ভেতরে বিভাজন বা গ্রুপিংয়ের রাজনীতি থেকে দূরে থাকবেন। আমাদের এমন নেতা প্রয়োজন যিনি স্বচ্ছতা ও সততার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে সুদৃঢ় করতে পারবেন।
আমরা চাই না কেবল ক্ষমতার আশায় আসা মুখোশধারী নেতাদের। আমাদের প্রয়োজন প্রকৃত জননেতা, যিনি জনগণের আস্থা অর্জন করবেন এবং দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য সমাজ গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
বিএনপির শক্তি হলো তৃণমূলের কর্মীরা। যদি এমন প্রার্থী মনোনয়ন পান যিনি কর্মীদের মর্যাদা দেবেন এবং সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠবেন, তবে নিঃসন্দেহে একটি গ্রুপিংমুক্ত, সৎ ও আধুনিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।
স্থানীয় আরও বিএনপি’র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে যানা গেছে, জয়পুরহাট-২ আসনে সৎ, যোগ্য, নিষ্ঠাবান, তরুন, দূনীতিমুক্ত ও দলীয় গ্রুপিং মুক্ত প্রার্থী দিলে বিএনপি’র জয় নিশ্চিত এবং তাকে নিয়ে আগামীতে তারেক রহমানের “রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা” বাস্তবায়ন এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়ন করা সম্ভব ।
জামায়াতে ইসলামী যদি আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়, তবে জয়পুরহাট-২ আসনে দলটির সম্ভাবনা কতটা উজ্জ্বল বলে মনে করেন? পৌর জামায়াতরে সেক্রেটারি রিপন হোসেন এর কাছে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী সবসময় জনগণের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে এসেছে। কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুরে আমাদের শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো রয়েছে, ইউনিয়ন থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত কর্মীরা সবসময় সক্রিয়। জনগণের আস্থা ও সমর্থন আমরা দীর্ঘদিন ধরে অর্জন করেছি।
যদি দল আমাদের মনোনয়ন দেয়, তাহলে এখানে একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হবে। জনগণের পাশে থেকে যে কাজগুলো আমরা করেছি মানবিক সেবা, শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়ন এসবই আমাদের ভিত্তিকে আরও শক্ত করেছে। তাই আমি বিশ্বাস করি, মনোনয়ন পেলে কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুরে জামায়াতে ইসলামী শক্ত অবস্থান থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে এবং জনগণের সমর্থন অর্জন করতে সক্ষম হবে।
